নোমান-রাকিব হত্যাকান্ডে অংশ নেয় ৩৫-৪০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী-(নতুন ঢাকা)

সারাবাংলা

নিজস্ব নিউজঃ

লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার পোদ্দার বাজারে যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন, আলমগীর হোসেন ওরফে কদু আলমগীর ওরফে টাকলা আলমগীর নামে আরোক ব্যক্তি। তিনি সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী গ্রামের আবু কালামের ছেলে। চন্দ্রগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৮ নম্বর আসামি আলমগীর।

পুলিশ জানায়, আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ ওরফে লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পরে সে আবুল কাশেম জেহাদীর বাহিনীতে যোগ দেয়। নোমান-রাকিব হত্যার ঘটনার সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত। পুলিশ মঙ্গলবার তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কদু আলমগীর হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চন্দ্রগঞ্জ আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল কবীর তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেওয়ান ফয়সাল নামের আরেক আসামি একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

বুধবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
কদু আলমগীর পুলিশকে জানায়, যুবলীগ নেতা নোমানের বিষয়ে দুইজন লোক ঘটনার দিন দুপুরে মোটরসাইকেলে করে তার বাড়িতে যান। তারা তাকে বলেন- একটা টার্গেট আছে, তাকে সাইজ করতে হবে। তাকে বশিকপুরে যেতে বলেন। পরে আলমগীর ওই দুইজনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে নাগেরহাট বাজারে যান। এরপর তারা হেঁটে একটি ফাঁকা মাঠে যান। সেখানে আরও ৩৫ থেকে ৪০ জন ছিলেন। তারা সাত থেকে আটজন করে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে যান। একজন ব্যক্তি ছিলেন- যিনি অস্ত্র নিয়ে আসেন। তিনি সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেন এবং কার্যক্রম ঠিক করে দেন। অস্ত্রের মধ্যে বন্দুক এবং পিস্তল ছিল।

কদু আলমগীরের বক্তব্য অনুযায়ী- তারা পাঁচ ভাগে ভাগ হয়ে যান। তাদের দলে আটজন ছিল। ব্যাকআপ পার্টি হিসেবে কাজ করেন তারা। এ গ্রুপটি ঘটনাস্থলের অদূরে করাত কলের পাশে প্রায় ৪৫ মিনিট ওঁৎ পেতে থাকেন। পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে গুলিন শব্দ শোনেন। এ গ্রুপটি দৌঁড়ে এসে দেখেন রাকিব ইমাম পড়ে আছেন। নোমান সাত/আট লাফ দিয়ে পালাতে থাকেন। তিনজন মিলে তাকে ধরে গুলি করে হত্যা করেন।

নোমান মারা গেলে তাদের গ্রুপটি নাগেরহাট মাদরাসার সামনে যায়। সেখানে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ছিল। পাঁচজন অটোরিকশায় করে চলে যান। বাকি তিনজন মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হত্যাকাণ্ডে তিনি নিজেও পিস্তল ব্যবহার করেছেন। ঘটনা শেষে অস্ত্রগুলো ওই ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেন।
পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, কদু আলমগীরের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র, মাদক, দস্যুতা, অপহরণ এবং বিস্ফোরণ আইনে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা, নোয়াখালীর চাটখিল এবং চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে কদু আলমগীরসহ যে আটজনকে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। ৩৫-৪০ জনের নামও বলেছেন। বিশাল পরিকল্পনা নিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তারা। হত্যা মামলাটির তদন্ত কার্যক্রমে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। তার মধ্যে ডিবি, র‍্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) রয়েছে। সিটিটিসির সাহায্যে সিসি টিভি ফুটেছে শনাক্তকৃত আলমগীরকে ধরতে সক্ষম হই আমরা। ঘটনার পরদিন তিনি ঢাকায় পালিয়ে যান বলে জানান আলমগীর।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ বি ছিদ্দিক, মংনেথোয়াই মারমা, সোহেল রানা, ডিআইওয়ান আজিজুর রহমান মিয়া ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরের পোদ্দার বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং একটি অস্ত্রধারী বাহিনী প্রধান আবুল কাশেম জেহাদীকে প্রধান আসামি করে আরও ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়।
এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি আবুল কাশেম জেহাদীকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *