লক্ষ্মীপুর জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহজেই মিলবে সেবা

জাতীয়

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অনেকটাই বদলে গেছে লক্ষ্মীপুর জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা দৃশ্যপট ও সেবার ধরন। সহজেই মিলছে সব সেবা। কর্তৃপক্ষের সেবাদান নিয়ে খুশি সেবা প্রত্যাশী ও গ্রহীতারা। কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ আর নজরদারিতে গতি পেয়েছে ডিজিটাল সেবাদান কার্যক্রম। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রতিটি স্তরে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্কসহ বয়স্ক, অসুস্থ রোগীদের সেবাদানে মোবাইল এনরোলমেন্ট ইউনিট। কর্তৃপক্ষের প্রতি কর্মদিবসে গণশুনানি কার্যক্রম সেবা প্রত্যাশীদের কাছে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করায় কমেছে হয়রানি ও ভোগান্তি। মিলছে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান। পাসপোর্টের জন্য আবেদন গ্রহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সেবা গ্রহীতরা স্বস্তি পেল। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও রয়েছে এই খবর। লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে এক সময় নানান অভিযোগ থাকলেও এখন আর তেমনটি শোনা যায় না তা বললেই চলে।

ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, নানা অব্যবস্থাপনা আর অরাজকতার মডেল হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিল লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। দালাল চক্রের ফাঁদ ডিঙ্গিয়ে সহজে পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানি ছিল অনেকটাই নিয়তির মত। নির্ধারিত ফিয়ের বাইরে দর কষাকষির বাড়তি টাকা আর ধরাধরি ছাড়া সহজে মিলত না কোন পাসপোর্ট। অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর অসহযোগিতা সেবা প্রত্যাশীদের এই হয়রানিকে আরও অসহনীয় করে তুলেছিল। প্রতিবাদ করেও মেলেনি কোন প্রতীকার। এসব নানা কারণে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। তবে এই চিত্র এখন বদলে গেছে অনেকটাই। সহজেই মিলছে প্রত্যাশিত সেবা।

কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট পেতে এখন প্রতিদিন গড়ে ২ শত আবেদন জমা পড়ছে। অনলাইনে জমা দেয়া এসব আবেদনের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে গড়ে ২শত ই-পাসপোর্ট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই মিলছে পাসপোর্ট। কোন আবেদনকারী চাইলে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে তার আবেদন কী অবস্থায় আছে কিংবা হালনাগাদ তথ্য জেনে নিতে পারছেন।

এছাড়া এসএমএস এর মাধ্যমেও আবেদনকারীকে পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে পুলিশ ভেরিফিকেশন, এনআইডি সম্পর্কিত কোন ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে অফিস প্রধানের গণশুনানিতে নিষ্পত্তি করায় ভোগান্তি ও হয়রানি কমে এসেছে। আবেদনকারীদের সমস্যা সমাধানে প্রতিদিন এই গণশুনানি হচ্ছে। এসব নানামুখী উদ্যোগে একদিকে গতি পেয়েছে সেবাদান কার্যক্রমে। হজ যাত্রীদের জন্য আলাদা ডেস্ক। সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা করে হয়েছে। শীতকালীন সময়ে ফ্লোরে কার্পেট  এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্রেস্ট ফিডিং রুম। যার পাসপোর্ট তাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনভাবেই দেওয়া হয় না। অপরদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়ে গেছে বহুগুণ। কমেছে আবেদন ও ডেলিভারির জট। লক্ষ্মীপুর সদর দক্ষিণপাড়ার রুমা আক্তার ও রামগঞ্জ উপজেলার মো. হাছানুর জামান ভূঁইয়া আবেদনের পর নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির সেবা পেয়ে খুশি তারা।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের।

৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট জন্য সাধারণ ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতি জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ৬৪ পৃষ্টা ৫ বছরের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতি জরুরি ১২ হাজার ৭৫ টাকা। 

ই-পাসপোর্ট ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতি জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। ৬৪ পৃষ্টার জন্য ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতি জরুরি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে ২ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজে করিয়ে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এস এম জাকির হোসেন বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে  আমরাও অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন ই-পাসপোর্টের গড়ে ২শত আবেদন হচ্ছে। সহজেই গ্রাহকরা ই-পাসপোর্ট হাতে পেতে পারে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রদক্ষেপ নিয়েছি। ই-পাসপোর্টের প্রতি মানুষের যেন আগ্রহ বাড়ে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি। লক্ষ্মীপুর অফিসে যোগদান করার পর থেকেই দালালের দৌরাত্ম কমেছে। হয়রানি ও ঝামেলা মুক্ত সেবা দিতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। সেটা আমরা বদ্ধপরিক। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হচ্ছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধানে আবেদনকারীকে সরাসরি সহকারী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *