সেহেরীর সময় গরীব,অসহায়, নিঃস্বদের খোঁজখবর নিলেন লক্ষ্মীপুরের এসপি-(নতুন ঢাকা)

বাংলাদেশ

কাজী নাঈম উদ্দিন, ডেস্ক রিপোর্টঃ

লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনস মেসে সেহেরী খেয়ে, শহরের উত্তর স্টেশন সংলগ্ন নুরজাহান হোটেলের পাশে
গরীব,অসহায়, নিঃস্বদের খোঁজখবর নিলেন লক্ষ্মীপুরের এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ
ভোররাতে সেহেরীর সময় এসপির সাথে অসহায় মানুষগুলোর হাঁসি মাখা কাহিনী এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফের ফেইজবুক থেকে এনে হুবহুব নিচে তুলে ধরা হলো

সেহেরী খেলাম আজ পুলিশ লাইনস মেসে
সেহেরী খেয়েই শহরে এলাম।শহরের হোটেলের সামনেই বাস থেমে আছে।কিছু মানুষজন হোটেলে সেহেরিতে ব্যাস্ত।সময়ও বেশী নাই।হোটেল সামনে বেশ কিছু মানুষের আনাগোনা।

হঠাৎই হুইল চেয়ারের পরিচিত সেই ছেলে বলে উঠলো,
— স্যার,আমাকে ঈদের খরচ দিতে হবে।একটা আচমকা অস্ফুটে নিদারুণ হাসি দিয়ে বেশ আবদারের সুরেই বলে উঠলো।তার বলার তথা চাওয়ার মাঝে অনেক আন্তরিকতার এক দৃষ্টি ছিলো।

বললাম, দিবো দিবো।শুনেই আবারও হেসে দিয়ে বললো,ঈদে বাড়ি যাবো স্যার।পাশেই পাঞ্জাবি পড়া আর একজন বললো,
— আমাকেও দিবেন স্যার!

তার কথা শেষ হতেই হুইল চেয়ারের ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,স্যার আপনার সাথে একটু হ্যান্ডসেক করি।খুব ভালো লাগে আপনার হাত ধরতে।আমিও হাসি দিয়ে তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।

আশে পাশে আরো চার পাঁচজন দাড়িয়ে আছে।লাঠি আর ক্রাচের উপর ভর দিয়ে আছে দু একজন।তারা অপলকে আমাদের কথাবার্তা শুনে যাচ্ছিলো।তার কাছ থেকে হ্যান্ডসেক করে পাশের মানুষের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।হ্যান্ডসেক করতেই খেয়াল করলাম।আমার হাত বাড়ানো দেখেই পেছন থেকে একজন বেশ দ্রুত তার হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।আমিও তাক্ষনিক তার হাত ধরে নিলাম।পর পর সবার সাথেই হাত মিলালাম।

পাশে দাঁড়িয়ে এরা গরীব অসহায় নি:স্ব।
এ স্থানে দাঁড়িয়ে যে যা পায় তাতেই সন্তুষ্ট চিত্তে তুষ্ট রয়।আমাকে দেখে কাছে ছুটে এসেছে।হাত পাতেনি কিছু চাইবার।হাত বাড়িয়েছে আমার হাতের সাথে একটু হাত মেলাতে।এটাই যেন বড্ড বেশী পাওয়া ছিলো।সবার মুখেই ভীষণ এক ভালো লাগার তুষ্টতা।সবাইকে সন্তুষ্ট চিত্ত ধরালাম আর আমন্ত্রণ জানালাম পুলিশ লাইনে।

হুইল চেয়ারের সেই ছেলেটির নাম জিজ্ঞেস করতেই জানলাম, নাম তার রোমান।মোবাইল নাম্বার নিয়ে রাখলাম।সঙ্গে মোবাইল আছে তার।পাশের পাঞ্জাবী পড়া ছেলেটি আবারও বললো,
— স্যার,আমারটা নিবেন না?

বডিগার্ড তার নাম্বারটা নিয়ে নিলো

পুলিশ লাইনে ফোর্সদের সাথে একটেবিলে পাশাপাশি বসে সেহেরি খাওয়ার একটা আলাদা সুখানুভূতি হলো।অনেকদিন আগেই ভেবেছিলাম ওদের সাথে সেহেরি খাবো।যা আজ খেলাম।

পরিবারের সাথেতো সব সময়ই সেহেরি করি।পুলিশ লাইনের ফোর্সদেরও পরিবার আছে কিন্তু চাকরির কারন তাদের মেস জীবনে অন্তভূক্ত হতে হয়।পরিবার ছেড়ে একা একাই পার করতে হয় কত কাল আর ক্ষণ।ছেলেকে নিয়ে তাই বেরিয়ে পরলাম এদের সান্নিধ্যে।যেতে যেতে ছেলে বলছিলাম,

সব সময়ই সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে হয়।জীবন মানেই সাধারণ।অনেকেই অনেক কিছু পারবে না,করবে না কিন্তু তোমাকে পারতে হবে,করতে হবে কেননা তুমিতো আমাকে দেখছো,তোমাকে দেখাচ্ছি।ছেলে আমার সেও খুব খুশী।তারও খুব ভালো লাগছে।আমাকে শুধু বলে,
— বাবা তুমি যা করছো এগুলো ভালো কাজ তাইনা!

বললাম,
তুমিও বড় হয়ে এমনই করবে…..

১১.০৪.২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *