স্বপ্নের নতুন ঠিকানায় রামগতির হাজারো অসহায় পরিবার

বাংলাদেশ

কাজী নাঈম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেছে প্রায় এক হাজার আশ্রয়হীনদের জীবন। ঘরের পাশাপাশি মাছ চাষের জন্য পুকুর ও সবজি চাষের জন্য জমি পেয়েছেন। এই মানুষগুলোর এক সময় ছিল না নিজস্ব কোনো স্থায়ী ঠিকানা। খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙা ঘরে থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করেছেন তারা।

সরেজমিনে এসব ঘরে বসবাস করা মানুষদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য গৃহীত এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ এর আওতায় ২০২১-২২ ও ২৩ অর্থ বছরে মোট ৯৯০টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ২০ কোটি ৫৯ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় করা হয়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে রামগতি উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ এর আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের হারুন বাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭৭টি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জলিল কলোনিতে ৮টি, জলিল কলোনির রাস্তার মাথায় ৩১টি, নতুন বাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩১টি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সামছুল হক জামে মসজিদের পাশে ৪২টি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তারহাট হাজি এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে ৩৩টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নোমানাবাদ এলাকায় ৩২টি, এক নম্বর ওয়ার্ডের হারুন বাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৬টি, চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৬৮টি, চরগাজী ইউনিয়ের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরদরবেশ গ্রামের রুলু মার্কেট সংলগ্ন ৬৩টি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ টুমচর করলা মার্কেট ৫৭টি, চরআব্দুল্লাহ ইউনিয়নের চরগজারিয়া ৫০টি, আলেকজান্ডার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর ডাক্তার গ্রামে ৪৩টি, চরবাদাম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরসীতা গ্রামে ৭৫টি, চরআলগী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুফিরহাট এলাকায় ২৮টি, চররমিজ ইউনিয়নের চরমেহার গ্রামে ১৪০টি ও চরগাজী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের টুমচর গ্রামে ৮৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

উপজেলার চর কলাকোপা আশ্রয়ণের বাসিন্দা আয়েশা বেগম (৫৮) নামের এক সুবিধাভোগী প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আগে আমরা ছোট ভাঙা ঘরে থেকে শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেছি। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেওয়ায় এখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারছি। আগের মতো কষ্ট আর নেই।

আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চর ডাক্তার আশ্রয়ণের বাসিন্দা সৈয়দ আহমদ (৭০) জানান, আমরা সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি। শেষ বয়সে সরকারের দেওয়া পাকা ঘর পেয়ে এখন অনেক সুখে আছি।

চরসীতা আশ্রয়ণের বাসিন্দা, আব্দুল মতলব, বিবি রেখা ও জয়নব বানু একই মতামত ব্যক্ত করে বলেন, পাকাঘরে থাকব কখনও কল্পনাও করিনি। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ঘর দিয়েছেন। সাথে জমিও দিয়েছেন। এখন আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে শান্তিতে আছি। ঈদসহ বিশেষ বিশেষ সময়ে সরকারের সহায়তাগুলোও পাচ্ছেন বলে জানান তারা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া কহিনুর, পারভীন, শাহনাজসহ ১২ জন সুবিধাভোগী বলেন, আমরা ভীষণ খুশি। শেখ হাসিনা মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি।

প্রকল্পের অন্যান্য উপকারভোগীরা বলেন, তারা এখন অনেক ভালো আছেন। কারণ, এখানে শুধু তারা বাড়ি উপহার পাননি। পেয়েছেন মাছ চাষ করার জন্য পুকুর, সবজি চাষ করার জন্য জমি। এছাড়া বাড়িতে বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, পাকা টয়লেট, যা তাদের স্বপ্ন ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গৃহ ও ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। দুই শতাংশ ভূমিতে সেমিপাকা ঘরে দুটি শোবার ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর ও একটি বাথরুম সংবলিত ঘর বরাদ্দ পায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বচ্ছতার সাথে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। জেলা-উপজেলা প্রশাসন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় একেবারে নদী ভাঙা অসহায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের গুরুত্ব দিয়ে এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবং ঘরগুলোর গুণগত মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এমন একটি ভালো কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, যার কারণে আমরা কৃতজ্ঞ। এ প্রকল্প পৃথিবীতে একটি রোল মডেল। কারণ এভাবে কোনো দেশে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ পাকা ঘর তৈরি করা হয়নি। যা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়েছে। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজের গুণগত মান বজায় রেখে টেকসই ঘর তৈরি করে দারিদ্র, নদী ভাঙা গৃহহীনদের দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *